ঢাকা, শনিবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডিআরইউতে গোলটেবিল আলোচনা

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউর দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রিভিউর করার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকরা। সেই সাথে ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করারও তাগিদ দিয়েছেন তারা। 

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ডিআরইউ ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোল টেবিল বক্তারা এ দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটির সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক একরামুল হক ভূঁইয়া (লোটন একরাম), ঢাকা মেইল ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ।

আন্তর্জাতিক ফিনটেক কোম্পানী ‘নালা’ এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মাসুম, মসিউর রহমান খান, ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি গাযী আনোয়ার, মানি ট্রান্সফার অ্যাপ নালা’র হেড অব গ্রোথ মাহমুদুর হাসান, ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক ও জার্নালিস্ট কমিউনিটি বাংলাদেশের আহবায়ক কমিটির সদস্য দিদারুল আলম, সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুল ইসলাম।

মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক ভালো সুপারিশ আছে। আর যেসব জায়গায় অসংগতি রয়েছে সেগুলোর সমালোচনা করা প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে ধারা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা থাকা প্রয়োজন। কেননা ধর্মীয় কারণে অনেক ভায়োলেন্স তৈরি হয়। এসব ভায়োলেন্স বন্ধ করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধানটা থাকা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া নীতির সাথে আমি একমত। এটি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন। যারা সম্পাদক ও প্রকাশক হবেন তাদেরকে ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ এটি নীতি বিরুদ্ধ। সাংবাদিকদের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। কারণ অপসাংবাদিকতার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের বেতন নূন্যতম ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত। আর সাংবাদিকগণ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তিনি প্রতিবাদকে মব হিসেবে না দেখার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন। মিডিয়া লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি ও টিভির জন্য ২০-২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। যখন হাউজগুলো ভালনারেবল হবে তখন সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য এগুলো কাজে আসবে। 

সভাপতির বক্তব্যে আবু সালেহ আকন বলেন, আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বিপ্লবের পরে মিডিয়ার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকরা এখনো মবের শিকার হচ্ছে। ডিএফপির অনিয়মের কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। 

এম আবদুল্লাহ বলেন, ইউনিয়নের পাশাপাশি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সরকারের স্বীকৃতি দেয়া দরকার। কারণ সারাদেশে ইউনিয়নের শাখা নেই। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতার আওতায় আনতে হবে। 

ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, গণমাধ্যম কমিশন মূলত বিভিন্ন জেলায় পিকনিক করেছে। স্বচ্ছতা ও সত্যতার অনেক ঘাটতি রয়েছে তাদের রিপোর্টে। এই রিপোর্ট রিভিউ হওয়া দরকার। 

মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, যারা রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং পদধারী তারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে নৈতিকভাবেই পারেন না। 

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ সরকারের মিডিয়া বিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে ডিআরইউ’র প্রতিনিধি না থাকলে সত্যিকারের গণমাধ্যম সংস্কার হবে না। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন যথাযথ হওয়া দরকার। 

রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল বানানো জরুরি। 

মসিউর রহমান খান বলেন, মিডিয়ার সংখ্যা বাড়লেও কোন সরকারই সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কোন কাজ করে নাই। মালিকরা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে তাদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্য। 

লোটন একরাম বলেন, টিভি এবং অনলাইনকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালায় আনা দরকার। পত্রিকার সার্কুলেশনের মত টিভির টিআরপিও হাস্যকর। 

হারুন জামিল বলেন, সাংবাদিকদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেয়া খুবই জরুরি। 

গাযী আনোয়ার বলেন, কমিশনের রিপোর্টে আদিবাসী অথবা উপজাতি কোন শব্দই আসা উচিত নয়। সবাই বাংলাদেশি। আর সাংবাদিকদের হত্যা-নির্যাতনের বিচারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে। 

দিদারুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে। এটি বাস্তবায়ন করার দরকার। তাছাড়া মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো বিষয়ে সুপারিশে বিস্তারিত আসা দরকার।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাংবাদিকদের নিবন্ধন করে আইডি প্রদান, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য অভিন্ন বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের ডিক্লারেশনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন করা প্রয়োজন।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি