ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৮ অক্টোবর ২০২৫

জামায়াতের আইনজীবীর হাতে তিন সাংবাদিকের হেনস্তা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২৫, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে আদালতপাড়ায় জামায়াতপন্থি কয়েকজন আইনজীবীর হাতে তিন সাংবাদিক ‘হেনস্তার শিকার’ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে ওই তিন সাংবাদিককে কাঠগড়ায় ডেকে নিয়ে কারাগারে পাঠানোর কথা বলে সতর্ক করেছেন ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ পিয়াস। পরে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে আসামির ভিডিও করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

তিন সাংবাদিক হলেন- দৈনিক কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম জামসেদ আলমের আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এদিন ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা এবং ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানাও আদালতে হাজির হন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মশিউর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য আদালত আগামি ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করে।

পরে বুশরা যখন আদালত থেকে বের হন, তখন তা ভিডিও করতে যান কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা, একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম।

তবে জামায়াতপন্থি আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ, হাতিরঝিল থানার জামায়াতের রোকন ও আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমসহ কয়েকজন তাদের ভিডিও করতে বাধা দেন। সাংবাদিকরা পেশাগত কারণে ভিডিও করার কথা জানালে ওই আইনজীবীরা আরও চড়াও হন। এ সময় তারা তিন সাংবাদিককে বিচারকের কাছে ধরে নিয়ে যেতে উদ্ধৃত হন।

তখন সাংবাদিকেরা জানান, তারা আদালতে বাইরে আসামির ছবি তুলছেন। আসামির ছবি বা ভিডিও নিতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই।

এই কথায় উপস্থিত আইনজীবীরা ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের সামনে তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেন। এক পর্যায়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ‘কেড়ে নেন’। এসময় এই মামলার বাদী নুর উদ্দিন রানাকে দেখে হুমকি দিতে থাকেন তিনি।

বাদীকে উদ্দেশ্য করে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিম বলেন, আপনি সাংবাদিকদের ডেকে এনেছেন।

এরপর মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ পিয়াস তার আদালতে এই তিন সাংবাদিককে এজলাসে ডেকে নেন। এসময় আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ ‘কৌশলে পালিয়ে যান’। তখন বিচারক তিন সাংবাদিককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

বিচারক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের পরিচয় দেন। সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বিচারক বলেন, আপনারা কোর্টের সামনে হাঙ্গামা করেছেন। এখন ১১ টা ৩৮ বাজে, আপনাদের কারাগারে পাঠানো হবে। আর কোন কথা হবে না। আপনাদের সকলের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হোক।

মিনিট দুয়েক পর বিচারক বলেন, আপনারা নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে ছেড়ে দিবো। নাহলে কারাগারে যেতে হবে। কোন ছাড় নেই।

নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পরে এই তিন সাংবাদিককে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয় আদালত।

অভিযোগের বিষয়ে আইনজীবী আক্তারুজ্জামান ডালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিচারক ডেকে সমাধান করে দিয়েছেন।”

আইনজীবী রেজাউল হক রিয়াজ বলেন, “অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”

এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিআরইউ) প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি লিটন মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতের বাইরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কোর্টে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় অথবা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন কোন অপেশাদার আচরণ করেননি। সাংবাদিকগণ শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে জামায়াতের আইনজীবীদের দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হন সাংবাদিকরা। এসময় ওই সব আইনজীবীদের হট্টগোলে আদালতে পরিবেশ নষ্ট হয়। যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এসব বিবেচানায় না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারক অতিউৎসাহী হয়ে উল্টো তিন সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।

তিনি বলেন, একজন বিচারকের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি ওই বিচারকের অপসারণসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।

এমআর// 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি