ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাংলাদেশে স্বাধীনভাবেই কাজ করছে গণমাধ্যম: সম্প্রচার মন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৪, ১৭ জুন ২০২১

Ekushey Television Ltd.

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাধীনভাবেই কাজ করছে গণমাধ্যম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে, সেটি অনেক দেশেই করে না। এমনকি বাংলাদেশে যেমন স্বাধীনভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষ মতপ্রকাশ করতে পারে, সংবাদ পরিবেশিত হয়, অনেক উন্নত দেশেও সেক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। আমরা অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে আছি।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির ডিজিটাল মিডিয়া ল্যাব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী একথা বলেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম।

ড. হাছান বলেন, ‘আমরা চাই এই গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ। কারণ গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ ছাড়া রাষ্ট্রের বিকাশ সম্ভবপর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমাদের দেশে গণমাধ্যমের অবাধ বিকাশ ঘটেছে। গত ১২ বছরের খতিয়ান যদি আমি দেই তাহলে দেখা যায়, আমাদের দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। ১২ বছর আগে টেলিভিশন ছিল ১০টি এখন বেসরকারি টেলিভিশন ৩৫টি চালু এবং আরো ১০টি সম্প্রচারের অপেক্ষায়। আমাদের বেসরকারি রেডিও চ্যানেল ২২টি এবং হাজার হাজার অনলাইন পত্রিকা চালু রয়েছে। অনেকগুলো আইপি রেডিও এবং টেলিভিশন চালু রয়েছে। একইসাথে পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে ১২ বছর আগে ছিল সাড়ে ৪শ’ এখন সেটি সাড়ে ১২শ’ অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।’

এই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. হাছান বলেন, ‘আমরা দেখেছি বহু অনলাইন বা আইপি টিভি খুলে অনেকে সেটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে পরিচালনা করছে এবং সেখানে নানাধরণের বিষয় প্রচার করা হয় যেগুলো আমাদের সমাজ, সংস্কৃতির সাথে যায় না, যেগুলো তরুণ সমাজকে বিপথে পরিচালিত করে। আমরা এই সমস্ত আইপি টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে বিশ্ববদ্যালয়ের মতো যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান আইপি টিভি চালু করবে, আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই। এটি শিক্ষার প্রসার ও ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং একই সাথে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীসহ সবাইকে সংযুক্ত রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব টিভি ও রেডিও ছাত্রদের মেধা বিকাশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যদি আমার নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, আমার স্কুলের শিক্ষা, কলেজের শিক্ষা আমাকে শুধু ডিগ্রী দিয়েছে তা নয়, ডিগ্রীর পাশাপাশি আমার অন্য সুপ্ত বিষয়গুলো যদি বিকশিত করার সুযোগ করে না দিতো, তাহলে আমি আজকের এই জায়গায় কখনো আসতে পারতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু বিশ্বমানের শিক্ষাই দেবে না, এমন উন্নত মানুষ তৈরি করবে, যারা পৃথিবীকে পথ দেখাবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ছাত্রদেরকে শুধুমাত্র জ্ঞান দিলেই হয় না, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে একজন ছাত্রকে গড়ে তুলতে হলে তার মেধার সাথে মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ, মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। কারণ আজকের পৃথিবীতে মানুষ শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবে, অপরের জন্য ভাবে না। মানুষ যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করে, পশ্চিমা দেশের মতো তারা নিজের বাবা-মার জন্যও ভাবে না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক বন্ধন পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং অনেক গভীরে প্রোথিত। আধুনিকতার ছোঁয়া অবশ্যই দরকার, আধুনিক হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আধুনিক হতে গিয়ে আমরা যেন পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ না করি। আমাদের পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধগুলো যেন হারিয়ে না যায়, আমরা যেন ক্রমাগত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে না যাই।

‘মেধাবিকাশের জন্য ডিগ্রি দেয়ার পাশাপাশি মেধার নানামুখী বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পৃথিবীতে বহু মানুষ আছে ডিগ্রির বিবেচনায় তাদের কোনো ডিগ্রিই নেই, যারা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করতে পারেনি কিন্তু পৃথিবীটাকে বদলে দিয়েছে’ উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ স্কুল থেকে পালিয়েছিলেন, কাজী নজরুল তো পড়তেই পারলেন না, মেট্রিক পাস করতে পারেনি, লালন তো স্কুল কি সেটা জানতেই পারেনি। 

আবার ভারতের সংবিধান প্রণেতা আহমেদ কর তিনি নিম্নবর্নের হিন্দু ছিলেন বিধায় স্কুলে ক্লাসে ঢুকতে দিতো না, বারান্দায় বসে তিনি পাঠদান অনুসরণ করতেন, মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুলে যেতেন, কোনো গাড়ি তাকে নিতো না, অথচ তিনি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ সংবিধান ভারতের সংবিধান প্রণেতা। তৈমুর লং খোড়া ছিলেন, নেপোলিয়ান বেঁটে ছিলেন, বিলগেটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেল করে বের হয়ে গিয়েছেন, তিনি কম্পিউটার সাইন্সেরই ছাত্র ছিলেন। কম্পিউটার সাইন্সে পাস করতে না পারার কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট ছিলেন। এদের নিয়ে পৃথিবী গবেষণা করে, তাদের ওপর পিএইচডি ডিগ্রিও হয়। তাই জীবনে উন্নতি লাভ করতে কোনো কিছুই বাধা নয়। শুধু স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি, স্বপ্ন পূরণের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে হয়, তাহলেই স্বপ্ন পূরণ হয়।

অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির ওয়েবসাইট থেকে পরিচালিত এনএসইউ রেডিও এবং এনএসইউ টিভি’র অনুষ্ঠান দেখানো হয় এবং তথ্যমন্ত্রী একটি সংক্ষিপ্ত ‘টক শো’তে অংশ নেন।

এসি
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি