ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

সয়াবিনের উর্বর ভূমি লক্ষ্মীপুর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

সয়াল্যান্ড হিসেবে খ্যাতি রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলার। মেঘনার উপকূলীয় এ জেলায় দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদন হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আবাদ, বাম্পার ফলন, টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুর সয়াবিনের রাজধানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

এ জেলার মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকেরা এই অর্থকরী ফসলটি উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবর্তন করছেন তাদের জীবনযাত্রায়। জেলার প্রায় শতভাগ কৃষক সয়াবিন আবাদের সঙ্গে জড়িত। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে এ অঞ্চলে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়।

লক্ষ্মীপুরে এবার প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন বীজ উৎপাদন হবে, তা-ও জেলার রায়পুর উপজেলার জেগে ওঠা চরের বুকে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বীজের জন্যই এ অঞ্চলে রবি মৌসুমের (কার্তিক) শুরুতেই রায়পুরের টুনুর চর, চর ঘাষিয়া, চর কাচিয়া, কানিবগার চরে সয়াবিন চাষ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। সয়াবিনগুলো বীজ হিসেবেই বাজারজাত করা হয়। প্রতি মেট্রিক টন বীজ প্রায় ২ লাখ টাকা করে বিক্রি করা হয়। 

সে হিসেবে ৪ হাজার মেট্রিক টন বীজ সয়াবিন বীজ থেকে শুরুতেই লেনদেন হয় ৮০ কোটি টাকা। মৌসুমের মাঝামাঝি সময় (মাঘ) দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়। এসব জমির উৎপাদিত সয়াবিন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি হয়।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য হিসেবে সয়াবিনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ হচ্ছে এতে ৪০ শতাংশের বেশি আমিষ এবং ২০-২২ শতাংশ তেল রয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিন শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ভিটামিন এ, বি এ সি-র উন্নত উৎস হিসেবে কাজ করে। সয়াবিন শুধু কোলস্টেরলমুক্তই নয়, বরং রক্তে কোলস্টেরলের পরিমাণ কমানোর মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সয়াবিনজাত প্রোটিনের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে স্তন ক্যানসার, অন্ত্রের ক্যানসার ও গ্রন্থির ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে সয়াবিন। সয়াবিন পেশি গঠন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া সয়াবিন হজম বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস রোগ নিরাময় করে। মেয়েদের মাসিককালীন প্রদাহ, আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অস্বাভাবিকতা নিয়ন্ত্রণ করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রবি মৌসুমের মধ্যভাগে (জানুয়ারির শুরু) লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর, রায়পুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষাবাদ হয়। এরমধ্যে রামগতি উপজেলারও কিছু অংশ আছে। সয়াবিন ঘিরে তখন ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ সয়াবিন উৎপাদনের জন্য চলতি মৌসুমে ২,২০০ মেট্রিক টন বীজ প্রয়োজন। বিএডিসি ও বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করে কৃষকদের সরকারি মূল্যে ১২০ টাকা দরে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৫ মেট্রিক টন বীজ স্বল্পমূল্যে সরকারিভাবে কৃষকদের দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন জানান, বপনের জন্য সাড়ে ৫ মেট্রিক টন সয়াবিন বীজ সরকারিভাবে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে। বিএডিসিসহ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র থেকে এ বীজ সংগ্রহ করা হয়। বাকি বীজ সয়াবিন কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন করা হয়।

১৯৮২ সালে জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সয়াবিনের চাষ করে মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) নামে একটি সংস্থা। উৎপাদন উপযোগী উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রথমবারেই উৎপাদনে আসে বড় ধরনের সাফল্য। এরপর জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে শুরু হয় সয়াবিন। এ অঞ্চলের সয়াবিন চাষের সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমএম/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি