ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান আর নেই

ইলিয়াস কামাল বাবু,সন্দ্বীপ 

প্রকাশিত : ২৩:৩৯, ১৮ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২৩:৫৭, ১৮ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবিএম সিদ্দিকুর রহমান আর নেই। বুধবার (১৮ আগস্ট) উপজেলা কমপ্লেক্সস্থ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। 

আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১০টায় উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এসময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানো হবে। সন্দ্বীপ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের দুই দুইবার নির্বাচিত কমান্ডার ছিলেন।

এ বি এম ছিদ্দিকুর রহমান ১৯৬৮ সালে সন্দ্বীপের কাটগড় গোলাম নবী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ৭০’র নির্বাচনে জাতীয় নেতা এম.আর ছিদ্দিকীর পক্ষে সন্দ্বীপে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।  

তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি সচেতন ছিলেন। ৮ম শ্রেণি পড়া অবস্থায় ৬ দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু সন্দ্বীপ এলে স্কুল থেকে মিছিল নিয়ে সন্দ্বীপ টাউনের জনসেবায় যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের সময় কাটগড় গোলাম নবী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শাস্তি স্বরূপ তিনি  টিসি পান। সেই সাথে তাঁকে ৯টি বেত্রাঘাত করা হয় তাঁকে। এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় সে যাত্রায় তাঁর শাস্তি মওকুফ করা হয়।

একাত্তরে ২৫ মার্চ কালোরাতে পাক বাহিনী চট্টগ্রামে হামলাকালে তিনি পূর্ব মাদার বাড়ী সিটি কলেজ ছাত্র হোষ্টেলে অবস্থান করছিলেন। ২৭ মার্চ তিনি সন্দ্বীপ চলে আসেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিলে তিনি দেশ মাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এক পর্যায়ে ২৬ জনের একটি দলের সাথে তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ভারতের উদয় হয়ে হরিনা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পৌঁছেন। পরে তাদের আগরতলা বিমান ঘাঁটি, জাফলং বিএলএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, শিলিগুড়ি হয়ে শাহরামপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সবশেষে সর্বমোট ১২৬ জনের একটি দলকে ভারতের দেরাদুনে টান্ডুয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাক্ষাৎ পান চার ছাত্রনেতা-শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমদ, সিরাজুল আলম খান ও আব্দুর রাজ্জাকের। 

দেরাদুনের এ ক্যাম্পটি পৃথিবীর বিখ্যাত একটি গেরিলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ভারতের জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে তাঁদের ৩ মাস গেরিলা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে ছোট, বড়, মাঝারি ও ভারী অস্ত্র চালনাসহ বোমা বিষ্ফোরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাঁদের। জেনারেল উবান পৃথিবীর ৩ জন শ্রেষ্ঠ গেরিলা প্রশিক্ষকের মধ্যে একজন। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের লোক ছিলেন। নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের ইদ্রিস ভাইয়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অপারেশনের দায়িত্ব পেয়ে ২৬ জনের (রয়েল বেঙ্গল ফোর্স) গ্রুপটি দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। পরে ঐ গ্রুপটি  থেকে তিনি সহ ১২ জন আলাদা হয়ে তাঁরা সন্দ্বীপ চলে আসেন। বিএলএফ’র এ গ্রুপটি সন্দ্বীপের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রথম গ্রুপ হিসেবে স্বীকৃত। এ গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন-রফিকুল ইসলাম। 

এই ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সবাই ছিলেন ট্রেনিং ইন্সস্ট্রাক্টর  হিসেবে গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং সমমর্যাদা সম্পন্ন। সন্দ্বীপ থানা আক্রমণ অভিযানে তাঁরা ১২ জন বিএলএফ যোদ্ধা ছাড়াও ২৫ জন বাঙ্গালী মিলিটারী অংশ নেয়। এ ছাড়া সন্দ্বীপে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আরো ৫০/৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। প্রচুর গোলাগুলি শেষে থানায় অবস্থানকারী পাকবাহিনী অস্ত্র-শস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করে। মূলত ৭ ডিসেম্বর থেকেই সন্দ্বীপ পাক বাহিনী মুক্ত অঞ্চল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরিচালিত হতে থাকে।

এ বি এম সিদ্দিকুর রহমানের মৃত্যুতে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাস্টার শাহাজাহান বি.এ, যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, চেরী ব্লোসমস ইন্ট্যারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সালেহা কাদের, সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ শোক প্রকাশ করেছেন। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি