ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

এ যেন অন্যরকম এক বাজেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৪৩, ১১ জুন ২০২০ | আপডেট: ২৩:৫০, ১১ জুন ২০২০

দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমন চলছে। এ ভাইরাস শুধু জনজীবনকেই বদলে দেয়নি। এলোমেলো করে দিয়েছে সাংবিধানিক কার্যক্রমও। করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থায় বাজেট পেশ করা হয়েছে সংসদে। দেখা যায়নি সাংসদদের চিরাচরিত উপস্থিতি। যারাই এসেছেন, তাদের সবাই মুখেই মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরিহিত। কেউ কেউ মাথায় আবরণও পরেছেন। এ যেন অন্যরকম এক বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন দেখলো বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

মহামারি করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।

এক ঘন্টারও কম সময়ে ভিডিও প্রেজেন্টেশনে বাজেট প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্থফা কামাল। অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার বেশিরভাগটাই ভিডিও প্রেজেন্টেশন। মাত্র ৪০ মিনিটে অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যতের পথপরিক্রমা জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। এটিও অন্যরকম একটি ইতিহাস।

করোনা সংক্রমণ রোধে সব সংসদ সদস্য ছিলেন না অধিবেশনে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখেন সংসদ সদস্যরা। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডানে ও পেছনে বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হয়। সংসদ সচিবালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাইরে যাওয়ার ওপর ছিলো নিষেধাজ্ঞা। 

প্রতিবছরের মতই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে থাকলেও তার আগমনে যেসব আনুষ্ঠানিকতা থাকে সেটা এবার ছিলো না। বাজেট উপস্থাপনা দেখতে তিন বাহিনী প্রধান, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমাজের বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যেখানে বাজেট অধিবেশনে সারাক্ষণ গম গম করে কক্ষগুলো, ফাঁকা থাকে না কোনো চেয়ারই। সেখানে এবার দূরত্ব মানতে হয়েছে। তাই কোরাম রেখেই সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি সীমিত করা হয়। তাই এই চিত্রটি ইতিহাস হয়েই থাকবে।

অধিবেশনে আগেই প্রবীণ ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে না আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি থাকলেও তা মোকাবেলার জন্য কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বাজেট অধিবেশন থেকে যাতে নতুন কেউ সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে ‘সঠিকভাবে মোকাবেলা ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব দৃঢ়তার সাথে কাটিয়ে ওঠার’ স্বার্থে এবার গতানুগতিক বাজেটের ধারা থেকে কিছুটা সরে এসেছি। সে কারণে এবারের বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে কাঠামো পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ, প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাজেটে বরাদ্দের টাকায় জেলা পর্যায়ের হাসপাতালের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (বিআইটিআইডি) সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

বলা যায়, বাজেটে প্রবৃদ্ধি বরাদ্দ, রাজস্ব আয় সবকিছুজুড়েই স্থান করে নিয়েছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। করোনার জন্য একদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ছাড় দিতে হয়েছে। অপরদিকে করোনা মোকাবেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় চারটি প্রধান কর্ম-কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। তা হলো- সরকারি ব্যয়ে বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ সুবিধা দেয়া, হত দরিদ্রের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানো এবং বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার যে কর্মকৌশল নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করবে। সেইসঙ্গে কার্যকর সার্ভেইলেন্স ও ডায়াগনস্টিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পিপিইর যোগান বৃদ্ধি এবং ভেন্টিলেটর ও আইসোলেশন ইউনিট বাড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তাররোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সঙ্কটের পাশাপাশি আশাবাদের কথাও বলেছেন বার বার।

প্রসঙ্গত, করোনাকালের বিশ্বে অর্থনীতিতে নানামুখী প্রতিকূলতার মধ্যেও ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ের এবারের বাজেট দেশের ৪৯তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাজেট।

এসি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি