ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

অপ্রাপ্তবয়স্ক বাদির আসামি মৃত দাদা, জেল খাটে নাতি!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৪৫, ১৪ মে ২০২০

মামলার এজহার ও আজিজুর রহমান।

মামলার এজহার ও আজিজুর রহমান।

মামলার এজহার অনুযায়ী, আসামির নাম মো. আব্দুল আজিজ মিয়া। মারা গেছেন ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু তার নামেই এখন কারাগারে রয়েছেন নাতি আজিজুর রহমান। মামলার বাদিও অপ্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু এজহার যাচাই-বাছাই না করেই পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে সৌদি আরব ফেরত আজিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে। চাঞ্চল্যকার এ ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল গ্রামের। 

অভিযোগ, সরাইল থানার ওসি নাজমুল আহমেদ ও অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) হোসেন মো. কামরুজ্জামান বাদি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত করেছেন।

খোঁজ নিজে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পাকশিমুল বাজারে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ডিলারশিপ চালাচ্ছেন পাকশিমুল গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে আজিজুর রহমান। আর পাকশিমুল বাজারের পার্শ্ববর্তী অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল বাজারে ওরিয়ন ও সেনা এলপি গ্যাসের ডিলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের জিয়াউর আমিনের ছেলে মো. রিফাত মিয়া। আজিজুর সৌদি আরবে চলে যাওয়ায় তার বাবা আবু সিদ্দিকই ডিলারশিপ চালান। গত কয়েক মাস আগে আজিজুর আবার দেশে ফিরে এসে ব্যবসার হাল ধরেন। 

বসুন্ধরা কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, ডিলার আজিজুর পাকশিমুল ও আশপাশ এলাকায় ক্রেতাদের কাছে বসুন্ধরা গ্যাস সরবরাহ করবেন। আর যদি অন্য কেউ বসুন্ধরার গ্যাস বিক্রি করেন তাহলে আজিজুরের কাছ থেকে নিয়েই বিক্রি করতে হবে। কিন্তু রিফাত মিয়া বসুন্ধরার ডিলার না হয়েও অন্য জায়গা থেকে বসুন্ধরার গ্যাস কিনে এনে পাকশিমুল বাজার, অরুয়াইল বাজার ও আশপাশ এলাকায় বিক্রি করেন। অবৈধভাবে বসুন্ধরার গ্যাস বিক্রিতে নিষেধ করলে রিফাতের সাথে বিরোধ তৈরি হয় আজিজুরের। 

গত ২ মে সকালে বসুন্ধরার গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি রিফাতের একটি গাড়ি পাকশিমুল বাজারে আটকে দেন আজিজুর ও তার বাবা আবু সিদ্দিক। পরবর্তীতে পুলিশ এসে গ্যাসের সিলিন্ডারসহ গাড়িটি জব্দ করে অরুয়াইল ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বিষয়টি সমাধান করতে উভয়পক্ষকে ক্যাম্পে ডাকেন এসআই কামরুজ্জামান। কিন্তু সমাধান না করে আজিজুরকে আটক করে পুলিশ। 

পরবর্তীতে ওইদিনই রিফাতের ছোট ভাই মো. নোহাশ জিয়া বাদি হয়ে আজিজুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেন। অপ্রাপ্ত বয়স্ক নোহাশের মামলার এজহারে আজিজুরের নাম লেখা হয়েছে মো. আ. আজিজ মিয়া। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম আজিজুর রহমান। আর বাবার নাম আবু সিদ্দিক। আ. আজিজ মিয়া হলো আজিজুরের দাদার নাম। যিনি ৫০ বছরের বেশি সময় আগে মারা গেছেন। যদিও এজহারে আসামির বাবার নাম হাজী আবু সিদ্দিক উল্লেখ করা হয়েছে। 

আইন অনুযায়ী, অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ মামলার বাদি হতে পারে না। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, নোহাশ অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার বয়স এখনও ১৮ বছর হয়নি। যদিও এজহারে নোহাশের বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। 

আজিজুরের বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, বসুন্ধরার ডিলার না হয়েও রিফাত অবৈধভাবে বসুন্ধরার গ্যাস বিক্রি করে। এতে করে আমরা ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। রিফাতকে নিষেধ করলেও সে শুনেনি। উল্টো তার নাবালক ভাইকে দিয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে। আমরার ছেলে সৌদি আরবে বড় ব্যবসা করত। সে গ্রামে অনেক দান-দক্ষিণা করে, অথচ তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়েছে। পুলিশ টাকা খেয়ে আমার ছেলে সম্পর্কে যাচাই না করেই মামলা নিয়েছে। কিছু না করেও আমার ছেলে এখন জেলে রয়েছে। 

পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আজিজুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা। সে এলাকায় গরীব-সহায় ও মসজিদ-মাদরাসায় অনেক দান করে। গ্যাসের ডিলারশিপ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই চাঁদাবাজির মামলার আসামি হতে হয়েছে তাকে। ঘটনাটি সমাধানের জন্য পুলিশ ক্যাম্পে আমাকেও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সমাধান না করে আজিজুরকে আটক করা হয় তখন। আর মামলার বাদি নোহাশকে আমি খুব ভালো করে চিনি। তার বয়স ১৩-১৪ বছর। পুলিশ যাচাই না করেই মামলা নিয়েছে।

মামলার বাদি মো. নোহাশ মিয়ার বড় ভাই ও গ্যাসের ডিলার মো. রিফাত মিয়া বলেন, আজিজুর ব্যবসায়ীক প্রতিহিংসা থেকে প্রায় সময়ই আমাকে হেনস্তা করত। আমার সিলিন্ডার গ্যাস যখন তার এলাকা দিয়ে প্রবেশ করত তখন লোকজন দিয়ে আটকে রাখত। পরে চাঁদা দাবি করত। 

সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল আহমেদ বলেন, আজিজুর রহমানকে ওখানে সবাই আজিজ বলে ডাকে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। বাদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে মামলা নথিভুক্ত করার অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানান তিনি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি