আমেরিকা ঝুঁকছে পাকিস্তানের দিকে, মোদির কপালে চিন্তার ভাঁজ
প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ২ আগস্ট ২০২৫

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে একের পর এক চমক দিয়ে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ‘ট্যারিফ কিং’ খ্যাত ট্রাম্প ভারতের উপর কড়া শুল্ক বসিয়ে নজর ঘুরিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের দিকে। ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এবং তথাকথিত ‘রাশিয়া পেনাল্টি’র ঘোষণা দিয়ে মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ইসলামাবাদের সঙ্গে বড় একটি জ্বালানি চুক্তির খবর প্রকাশ করেন। পাকিস্তানের বিপুল খনিজ তেল রিজার্ভ ব্যবহারে আমেরিকার অংশীদার হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘কে জানে, একদিন হয়তো পাকিস্তানই ভারতেও তেল বিক্রি করবে!’ অথচ এই ট্রাম্পই তার প্রথম মেয়াদে পাকিস্তানকে বলেছিলেন “মিথ্যা আর ধোঁকার উৎস”। এখন সেই ট্রাম্পই পাকিস্তানকে সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে কাছের বন্ধুতে পরিণত করছেন, যা ভারতের জন্য শুধুই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি স্পষ্ট ঈঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এশিয়া প্যাসিফিকের নতুন ভূরাজনীতির দৃশ্যপট। ‘বন্ধুত্ব’ ও ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র কূটনৈতিক দোলাচলে মোদির কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ—নতুন বাস্তবতায় ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াটাই হবে ভারতের পরবর্তী কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন গাঁটছড়া
ট্রাম্পের ঘোষণায় জানা গেছে, জ্বালানি খাতে দুই দেশের অংশীদারিত্বে এখন মার্কিন কোম্পানি বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর আগেই পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশহাক দার জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। ফলে নতুন এই জ্বালানি চুক্তি শুধু তেল নয়, সামগ্রিকভাবে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামরিক মেলবন্ধনের নতুন অধ্যায়
এই কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পেছনে সামরিক সম্পর্কও বড় ভূমিকা রাখছে। ইউএসসেন্টকম প্রধান জেনারেল কুরিলাকে ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজে’ সম্মানে ভূষিত করে পাকিস্তান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে আগ্রহী। এই সম্মাননা দেওয়ার আগে ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান, যা আগে কখনো ঘটেনি।
সাম্প্রতিক সফরে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী প্রধানও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও কংগ্রেসে বৈঠক করেন, যেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ। এককথায়, সামরিক ও কৌশলগতভাবে দুই দেশ এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর পথে।
ভারতের জন্য সংকেত
এই পুরো প্রেক্ষাপট ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ভারত এতদিন আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কূটনৈতিক রূপরেখায় ভারতের গুরুত্ব যেন খানিকটা কমে যাচ্ছে। সাবেক কূটনীতিক কে সি সিং-এর মতে, চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যালান্সিং ফ্যাক্টর হিসেবে দেখলেও, ট্রাম্প এখন চীন-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিকতায় বিশ্বাসী, যেখানে ভারতের প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর আমেরিকার বাড়তি শুল্ক ও আরোপিত জরিমানাও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দিল্লিকে চাপে ফেলেছে। একই সময়ে পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের খোলামেলা আগ্রহ ভারতীয় কূটনীতির জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।
এসএস//
আরও পড়ুন