তাজরীন ট্রাজেডির ১৩ বছর: ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় শ্রমিকরা
প্রকাশিত : ১৯:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
২৪ নভেম্বর ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডের আজ তের বছর। ২০১২ সালে এই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে অন্তত ১১৯ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যান। আহত হয় আরও অর্ধশতাধিক শ্রমিক। পরবর্তীতে আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪ জন শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা দুঃখকষ্টে মৃত্যুবরণ করেন।
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করার জন্য ঘটনার পরপরই সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রতিটি অনুসন্ধানেই মালিক-কর্তৃপক্ষের শ্রমিক নিরাপত্তা বিষয়ে সার্বিক অবহেলার চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
ঐ প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বলা হয়,“তাজরিন ফ্যাশন লিমিটিড-এ সংঘটিত এই মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। যা দেশে এবং বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগুন লাগার বিষয়টি নাশকতা হতে পারে, তবে এত বিপুল মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য মালিকের অমার্জনীয় অবহেলাই দায়ী। এটি সুস্পষ্ট ভাবে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অপরাধ। তাই তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এর মালিককে দন্ড-বিধির ৩০৪ (ক) ধারায় আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করার সুপারিশ করা হল।”
এই পরিপ্রেক্ষিতে মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করা হয়। একটি মামলা দায়ের করেন এক নিখোঁজ শ্রমিকের ভাই। আশুলিয়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করে। আশুলিয়া থানার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তিন জন। আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো: মোস্তফা কামাল, সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো: মনসুর আলী মন্ডল, সিআইডি পুলিশ-এর পরিদর্শক এ কে এম মহসীনউজ্জামান খাঁন। তারা ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ৩২৩/৩২৫/৪৩৬/৩০৪/৩০৪-ক/৪২৭ দ বিধিতে সিএমএম কোর্টে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এই মামলায় সাক্ষী করা হয় ১০৪ জনকে।
পরবর্তীতে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত মালিক মো: দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ১ অক্টোবর, ২০১৫।
বিগত ১০ বছরে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৬৮টি তারিখ ধার্য ছিল। এই ৬৮ দিনের মধ্যে মাত্র ১০ দিন রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেছে এবং অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ১০৪ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। সর্বশেষ দুইটি সাক্ষ্য শুনানির দিন এই মামলার প্রধান আসামী কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন অসুস্থতার অজুহাতে হাজিরা দেননি। শ্রমিক নেতাদের আশঙ্কা পোশাক কারখানার মালিক হয়তো পালিয়ে গিয়েছেন।
এদিকে ২০১৫ সালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে তাজরীন ফ্যাশনস মামলাটির কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত কয়েকজন গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম। তাদের দাবি তারা প্রত্যেকটি সাক্ষ্যশুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন।
তাদের অভিযোগ, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার পেছনে মামলাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলা রয়েছে।
এমআর//
আরও পড়ুন










