ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪

ওয়ানডেতে ৫ উইকেট ও সেঞ্চুরি না পাওয়া সেরা একাদশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:০০, ২৬ আগস্ট ২০২১

মিসবাহ উল হক

মিসবাহ উল হক

একটা ক্রিকেটারের প্রথম স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলা, তারপর জাতীয় দলে সুযোগ পেলে তার ইচ্ছা থাকে দলে নিয়মিত হওয়া এবং দলের জয়ে অবদান রাখা। দলের হয়ে সেঞ্চুরি করা আর বোলার হলে পাঁচ উইকেট নেয়া। 

কিন্তু এই সেঞ্চুরি করা বা পাঁচ উইকেট নেয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়, নিজের সেরাটা খেলেও হয়তো কোনও বোলারের অসাধারণ একটা ডেলিভারিতে সেঞ্চুরির আগে আউট হয়ে যায় কেউ। আবার পিচের সুবিধা বা কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে দুই-তিনজন বোলার একসাথে ভাল করলে পাঁচ উইকেট পাওয়াও কঠিন হয়ে যায়। অন্যভাবে বললে, সবাই তো আর মুরালিধরন বা শচীন টেন্ডুলকার নয় যে, সেঞ্চুরি বা পাঁচ উইকেট পেয়ে যাবে সহজেই।

তারপরও টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট বা সেঞ্চুরি পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ বলা যায়। তবে ওয়ানডেতে ব্যাপারটা টেস্টের তুলনায় বেশ কঠিনই বটে। একটা বোলার ১০ ওভার বল করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার জন্য পাঁচ উইকেট পাওয়াটা অনেক কঠিন। তবে ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি করাটা রান উৎসবের বর্তমান সময়ে কঠিন বলে চালিয়ে দেয়াটা একটা বাহানা। তবে যারা শেষের দিকে ব্যাট করে তাদের জন্য সেই সুযোগ কমই আসে।

ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট কিংবা সেঞ্চুরি করা যতই সহজ বা কঠিন হউক, বেশীরভাগ নিয়মিত খেলোয়াড়েরই এই সুযোগ আসে। তবে কিছু মানুষের দুর্ভাগ্য থেকে যায়, যারা নিয়মিত পারফর্ম করলেও এগুলোর নাগাল পায় না। তাদের নিয়েই এই একাদশ-

১. মাইকেল ভন: ৮৬ ওয়ানডেতে ২৭.১৫ গড়ে ১৯৮২ রান, অপরাজিত ৯০ রান সর্বোচ্চসহ রয়েছে ১৬টি ফিফটি। মাইকেল ভন মূলত একজন টেস্ট ব্যাটসম্যান। বর্তমান সময়ের ক্রিকেটার হলে হয়তো ওয়ানডে তথা শর্টার ফরমেটে তার সুযোগও হতো না। তবে টেস্টে ভালো নেতৃত্ব দেয়ার কারণে তিনি ওয়ানডে দলে সুযোগ পেয়েছেন এবং সেই দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। 

ওয়ানডেতে তার বেশ কিছু ভালো ইনিংস থাকলেও সেঞ্চুরির কাছে আর যেতে পারেননি। ২০১৫ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন বিশ্বকাপে টানা দুটি সেঞ্চুরি করেন, তখন তিনি আক্ষেপ বা মজা করে বলেছেন, মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে টানা দুটি সেঞ্চুরি করে আর আমার একটাও নেই। 

২. জ্যাক রুডলফ: ৪৫ ওয়ানডেতে ৩৫.৫৭ গড়ে ১১৭৪ রান, ৭টি ফিফটি তার নামের পাশে থাকলেও টেস্টে ৬টি এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫১টি সেঞ্চুরি থাকলেও ওয়ানডেতে নেই ৯০ রানের ইনিংসও, সর্বোচ্চ ৮১। 

জ্যাক রুডলফ, নামটি বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের নিকট অতি পরিচিত। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে তার কোনও সেঞ্চুরি নেই। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার না ছুতে পারলেও তার গড়টা কিন্তু বেশ ভালো।

৩. মিসবাহ উল হক: ১৬২ ওয়ানডেতে ৪৩.৪১ গড়ে করেন ৫ হাজার ১২২ রান। ৪২টি ফিফটি থাকলেও তার কোনো সেঞ্চুরি নেই, সেঞ্চুরির বেশ কাছে ৯০ রানে বেশ কয়েকবার তার অবস্থান হলেও অপরাজিত ৯৬-এর বেশী তিনি কোনওদিন যেতে পারেননি। আন্তজার্তিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি বিহীন রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার অবস্থান সবাইকে ছাড়িয়ে এবং ভবিষ্যতে তা ভাঙ্গার সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ।

৪. গাই হুইটাল: ১৪৭ ওয়ানডেতে ২২.৫৪ গড়ে ২৭০৫ রান, যেখানে আছে ১১টি ফিফটি। সাথে অফ স্পিনে ৮৮ উইকেট। ১৪৭টা ওয়ানডে খেলেও তার সেঞ্চুরি না থাকাটা বেশ অবাক করা ব্যাপারই বটে। তবে জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ে দলের জন্য কার্যকরী একজন মিনি অলরাউন্ডার ছিলেন।

৫. ইয়ান বোথাম: ১১৬ ওয়ানডেতে ২১১৩ রান এবং ১৪৫ উইকেট। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কপিল, ইমরান আর হ্যাডলির সঙ্গে তাকে ধরা হয় সেরা চারজন অলরাউন্ডারের একজন হিসেবে। টেস্টে তার রয়েছে একই টেস্টে সেঞ্চুরি এবং দশ উইকেট। কিন্তু বিধিবাম, ওয়ানডেতে তার কোনো সেঞ্চুরি এবং পাঁচ উইকেট নেই। যা হয়তো অনেককে অবাক করবে। এই একাদশের অধিনায়ক হিসেবে তার চেয়ে যোগ্য বোধহয় আর কেউ নেই।

৬. ইয়ান হিলি: ১৬৮ ওয়ানডেতে ১৭৬৪ রান, ৪টি ফিফটি এবং সর্বোচ্চ ৫৬ রান। ১৯৪টি ক্যাচ এবং ৩৯টি স্ট্যাম্পিং। বিশ্বের যে কোনও সেরা একাদশ বানালে তাকে উইকেটকিপার হিসেবে রাখা যায়। আর একবিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেট না খেলেও তার ওয়ানডে স্ট্রাইক রেট প্রায় ৮২। তাই শেষের দিকে রান তোলার গতি বাড়ানোর জন্য হিলি থাকবেন সবার আগে।

৭. ফারহান বেহারডিয়েন: ৫৯ ওয়ানডেতে ৩০.৬৮ গড়ে ১০৭৪ রান, ৬টি ফিফটির মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০। ওয়ানডেতে ২৭টি ক্যাচের পাশাপাশি তার শিকার ১৪ উইকেট। তিনি যতদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসেন, ততদিনে মিনি অলরাউন্ডার-এর টার্মটা ওয়ানডে থেকে বিদায় না নিলেও অকার্যকর হয়ে গিয়েছে। তারপরও ক্যালিস পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে দলের ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য তিনি কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।

৮. রঙ্গনা হেরাথ: মূলত টেস্ট বোলার হলেও বেশ কিছু ওয়ানডে খেলেন রঙ্গনা হেরাথ। ৭১ ওয়ানডেতে শিকার ৭৪ উইকেট, টেস্টে যেখানে তার ৩৪টি ইনিংসে পাঁচ উইকেট আছে, সেখানে ওয়ানডেতে চার উইকেট মাত্র একবার। রান পাহাড়ের এই যুগে রান আটকে রাখতে পারলেও উইকেট নিতে তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন না, তার ওয়ানডে পরিসংখ্যান সেটাই বলে। তবে নিজের দিনে শর্টার ফরমেটেও জ্বলে উঠতেন তিনি। ওয়ানডেতে না পারলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঠিকই পাঁচ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন হেরাথ। 

৯. রবিচন্দ্রন আশ্বিন: ১১১ ওয়ানডেতে ১৫০ উইকেট। আশ্বিন যখন ওয়ানডে দলে নিয়মিত ছিলেন, তখন তিনি দলের স্ট্রাইক বোলার থাকলেও পাঁচ উইকেট পাননি একবারও, চার উইকেট শিকারও মাত্র একবার। তবে, তিনি কিন্তু নিয়মিত উইকেট শিকারী ছিলেন।

১০. স্টুয়ার্ট ক্লার্ক: ৩৯ ওয়ানডেতে ৫৩ উইকেট। অস্ট্রেলিয়া দলে অনেক তারকার ভিড়ে তার সুযোগ তেমন মেলেনি। ত্রিশের পরে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও তার পারফরম্যান্স ছিলো ধারাবাহিক।

১১. ম্যালকম মার্শাল: ১৩৬ ওয়ানডেতে ১৫৭ উইকেট। আশির দশকের সর্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য, দুর্ধর্ষ একজন ফাস্ট বোলার। ম্যালকম মার্শাল যে কোনও দিনে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে দিতে পারতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হয়ে তার আছে অনেক অর্জন, তবে ওয়ানডেতে নেই কোন পাঁচ উইকেট। 

আর এদের সবার কিন্তু একজনের সাথে মিল আছে সে হলো সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার স্যার গ্যারি সোবার্সের। তিনিও কিন্তু ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট বা সেঞ্চুরি কোনটাই করেন নাই। অবশ্য তিনি ওয়ানডেই খেলেন মাত্র একটি। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও না কোনওভাবে মিল তো আছেই।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি