ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

‘শচীনকে ভুল করে আউট দিয়েছি কয়েকবার!’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৮, ২১ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৬:২০, ২১ জুন ২০২০

স্টিভ বাকনর ও শচীন টেন্ডুলকার

স্টিভ বাকনর ও শচীন টেন্ডুলকার

ক্রিকেট মাঠে আম্পায়ারের ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কেননা, আম্পায়াররাও যে মানুষ, যন্ত্র তো নন। তাই মাঠে অনেক সময় তাদের সিদ্ধান্ত দেয়াটাই স্বাভাবিক। এখন আধুনিক ক্রিকেটে আম্পায়ারদের ভুলের সম্ভাবনা অনেকটাই কমেছে। যেহেতু ক্রিকেট এখন অনেক বেশি যন্ত্রনির্ভর। ক্লোজ ক্যাচ থেকে শুরু করে এলবিডব্লিউ- প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন ভুল করার সম্ভাবনা কম। কারণ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখে নেওয়া যেতে পারে আদতে ব্যাটসম্যান আউট ছিলেন কিনা! 

কয়েক বছর আগেও ক্রিকেটে এত বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত নিতে হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যেত। আর অবসরের পর নিজেদের দেয়া এমন সব ভুল স্বীকার করেছেন কয়েকজন আম্পায়ার। কেউ কেউ আবার করেনওনি।

তবে তাদের তালিকায় নন স্টিভ বাকনর। নিজের বিচক্ষণতার জন্য আম্পায়ার হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এই ক্যারিবিয় তারকা। মাঠে দেয়া সিদ্ধান্তগুলোর জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি। তবে এর মাঝেও ছিল কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। যার বেশিরভাগেরই শিকার হন ভারতীয় মাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। অবসরের ১১ বছর পর হলেও তা স্বীকার করে নিলেন বাকনর, শচীন টেন্ডুলকারকে তিনি বেশ কয়েকবার ভুল আউট দিয়েছেন। 

সম্প্রতি বার্বাডোজে একটি রেডিও চ্যাট শোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন স্টিভ বাকনর। ম্যাসন এন্ড গেস্ট নামের সেই চ্যাট শোতে এসে বাকনর বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে শচীনকে দু'বার ভুল করে আউট দিয়েছিলাম। দেখুন, যে কোনো মানুষই ভুল করে। আমরা তো যন্ত্র নই। কিছু কিছু সময় মাঠের সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ায় একবার শচীনকে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলাম। ওটা আমার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বল উইকেটের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। আমি পরে রিভিউ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম। সেদিন শচীন আউট ছিল না। পরে অনুতাপ হয়েছে। দ্বিতীয়বার শচীনকে ভুল আউট দিয়েছিলাম ভারতের মাটিতেই। ওকে সেবার কট বিহাইন্ড আউট দিয়েছিলাম। শচীনের ব্যাটের সঙ্গে তখন বলের স্পর্শ হয়নি। ওই ম্যাচটা ছিল ইডেন গার্ডেন্সে। বিরাট বড় মাঠ। ওখানে খেলা হলে অনেক সময় আমরা কিছুই শুনতে পেতাম না। সেদিনও তাই হয়েছিল। অতো মানুষের চিৎকারে শচীনের ব্যাটে বল লাগার শব্দ শুনতে ভুল করেছিলাম। ওই ভুলের জন্য আমি নিজেও খুশি ছিলাম না।’

স্টিভ বাকনর একাধিকবার শচীনকে ভুলবশত আউট দিয়েছেন। আর তাই তাঁর প্রতি ভারতীয় সমর্থকদের ক্ষোভও ছিল। যদিও নিজের কর্মজীবনে সে কথা স্বীকার করেননি তিনি। তবে অবসর জীবনে এসে তিনি জানিয়েছেন, শচীনকে ভুল করে আউট দেওয়ার কথা। 

ক্যারিবিয়ান এই কিংবদন্তী আম্পায়ার এখন বসবাস করে নিউ ইয়র্কে। অবসর জীবনেও তাকে ঘিরে রয়েছে ক্রিকেটের নানা গল্প।

পুরো নাম- স্টিফেন অ্যান্থনি বাকনর। ১৯৪৬ সালের ৩১ মে জ্যামাইকার মন্টেগো-বে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন সাবেক এই বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আম্পায়ার। ক্রিকেট জগতে তিনি স্টিভ বাকনর নামেই সর্বাধিক পরিচিত। তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষকসহ ক্রীড়াজগতে কোচ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এরপর তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ফুটবল রেফারী এবং ক্রিকেট আম্পায়ার ছিলেন। ২০০৭ সালের অক্টোবরে 'ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায়' তিনি অর্ডার অব জ্যামাইকা বা ওজে পদকে ভূষিত হন।

স্টিভ বাকনরের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক ঘটে ১৮ মার্চ, ১৯৮৯ সালে এন্টিগুয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা পরিচালনার মাধ্যমে। ২৮ এপ্রিল-৩ মে, ১৯৮৯ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে টেস্টে আম্পায়ারিং করেন। এরপর কিছুদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারিং করার পর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আম্পায়াররূপে মনোনীত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০৩ এবং ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচগুলোতে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিজ দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত হয়। 

সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ বার্বাডোসে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ৪র্থ ওয়ানডের মাধ্যমেই স্টিভ বাকনরের বর্ণাঢ্য ২০ বছরের আম্পায়ারিং জীবনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। অবসরের আগে তিনি টেস্ট আম্পায়ার হিসেবে ১২৮টি (১৯৮৯–২০০৯) ও ওডিআই আম্পায়ার হিসেবে ১৮১টি (১৯৮৯–২০০৯) ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি