ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সামরিক শক্তিমত্তায় কে এগিয়ে: ইরান নাকি যুক্তরাষ্ট্র?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:০৪, ৪ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৩:০৫, ৪ জানুয়ারি ২০২০

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পতাকা

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পতাকা

ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হবার পর প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান। যারা জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পেছনে দায়ী তাদের জন্য ‘কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে’ বলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা। কিন্তু কতটা সক্ষমতা আছে ইরানের সামরিক বাহিনীর? অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যুদ্ধ বাঁধাতে চাইলে ইরানকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। খবর বিবিসি, ফক্স নিউজ’র।

পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। চলছে দেশ দুটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি। বিশ্বের দুই অঞ্চলের ক্ষমতাধর এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে শঙ্কা অনেকের।   

মার্কিন এফ-২২ ফাইটার। ছবি : এএফপি

এদিকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কায় মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই উত্তেজনা নিরসনে জরুরি বৈঠক ডেকেছে সৌদি আরব। আগামী ৩০ মে মক্কায় ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

যেভাবে শুরু যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা:

ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি ২০১৫ সালের একটি পারমাণবিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে। সে বছর ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি করে। 

ঐ চুক্তির পর ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয়। বিনিময়ে দেশটির বিরুদ্ধে আনা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে অনুমতি দেয়।

তবে ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম ইরান ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে এমন অভিযোগ এনে গত বছর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দেশটির ওপর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। চলতি মাসে ইরানও পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হয় যুদ্ধের উত্তেজনা। 

উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি : এএফপি

পারমাণবিক শক্তির তুলনা:

যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ হলেও এখন পর্যন্ত ইরানের বোমা নেই বলে ধারণা করা হয়। মার্কিনিদের হাতে ৭ হাজার ২০০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তাই পারমাণবিক শক্তির দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র।  

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানে সামরিক শক্তি

কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই বিশ্বে সামরিক শক্তিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। জলে, স্থলে, আকাশে মার্কিনিদের টেক্কা দিতে পারার মতো সক্ষমতা এখন পর্যন্ত কোনো দেশেরই নেই। এর কারণও আছে। মার্কিনিরা তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশাল এক বাজেট রাখে, যার পরিমাণ ৭১৬ বিলিয়ন ডলার। তবে নিজ দেশ থেকে বহুদূরে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মুখোমুখি হতে হলে দেশটিকে বেশ বেগ পেতে হবে। 

ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড। ছবি : এএফপি 

অন্যদিকে সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে এক হাত নেওয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের। ইরানের ডিফেন্স বাজেট ৬৩০ কোটি ডলার। 


সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ জন। এছাড়া সংরক্ষিত রয়েছে আরও ৮ লাখ ১১ হাজার জন। সেনাবাহিনীতে ট্যাংক রয়েছে ৬ হাজার ৩৯৩টি।  সাঁজোয়া যানের (আর্মরড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৬০টি। সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কামান রয়েছে ৩ হাজার ২৬৯টি। পাশাপাশি ৯৫০টি সংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ১৯৭টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে।  
ইরান: ইরানের বর্তমান সক্রিয় সেনাসদস্য ৫ লাখ ২৩ হাজার। এছাড়া সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন।  দেশটির ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪টি।  সাঁজোয়া যানের (আর্মরড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৫টি। সেনা সদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান (টোয়েড আর্টিলারি) রয়েছে ২ হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি সংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে।   

ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র প্রদর্শনী- সংগৃহীত

বিমানবাহিনী 
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ক্ষমতা বিশ্বে প্রথম স্থানে। দেশটির বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০৪টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ২ হাজার ৩৬২টি, অ্যাটাক বিমান ২ হাজার ৮৩১টি, হেলিকপ্টার ৫ হাজার ৭৬০টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৯৭১টি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সেরা স্টেলথ ফাইটার (রাডারে ধরা না পড়ে আক্রমণ করতে সক্ষম) এফ-২২ ও এফ ৩৬। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও পরিবহনের জন্য উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির।  
ইরান: ইরানের বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ৫০৯টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির। ইরানের হাতে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো স্টেলথ ফাইটার বিমান নেই। 

নৌবাহিনী 
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে মোট যানের সংখ্যা ৪১৫টি। এর মধ্যে এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে ২৪টি, ফ্রিগেট রয়েছে ২২টি, ডেস্ট্রয়ার রয়েছে ৬৮টি, করভেট রয়েছে ১৫টি ও সাবমেরিন রয়েছে ৬৮টি। এছাড়া পেট্রোল বোট ১৩টি ও মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে ১১টি। 
ইরান: ইরানের নৌবাহিনীতে এখন পর্যন্ত যোগ হয়নি কোনো এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার। বাহিনীটিতে ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং সাবমেরিন রয়েছে ৩৪টি। নেই কোনো ডেস্ট্রয়ার। তবে ইরানের ৮৮টি পেট্রোলবোট  ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে। 

এমএস/


 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি